জীবনের জয়গান

অভিমানী নজরুল

অভিমানী নজরুল

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) এর আগমন ধূমকেতুর মতো। সে সময়কালে রবীন্দ্র বলয় থেকে স্বতন্ত্র পথে বেরিয়ে আসা অগ্রগামী এক সৈনিক ছিলেন নজরুল। তাঁর সৃজনশীল নতুন লেখনি চিন্তা-ধারা তাঁকে অনবদ্য করেছে। তিনি বীরদর্পে অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলা সাহিত্যে; প্রভাব বিস্তার করেছেন বিকল্প চিন্তার সক্ষমদের ওপর।

কাজী নজরুল ইসলামের দ্রোহ ও প্রেমের তীব্রতায় অভিভূত হয়েছে সমকাল। দ্রোহ ও প্রেমের পাশাপাশি কবির অভিমানী সত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতা ও গানে। তিনি প্রচণ্ড অভিমানী ছিলেন। নজরুল মানুষকে সর্বদা আপন করে ভালোবেসেছেন আর তাই হয়তো মানুষের প্রতি ছিল তাঁর এত অভিমান। তিনি তাঁর সমগ্র জীবনে সর্বদা মানবের জয়গান করেছেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও সাম্যের কথা বলেছেন। তিনি তাঁর দেশ ও দেশের মানুষকে প্রচণ্ড ভালোবেসেছেন কিন্তু প্রত্যুত্তরে যে ভালোবাসা চেয়েছেন তাঁর জীবন দশায় তিনি সে ভালোবাসা দেখে যেতে পারেননি আর তাই তাঁর অভিমানী সত্তার বারংবার প্রকাশ লক্ষ করা যায় তাঁর কবিতা ও গানে।

তিনি লিখছেন-

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে।

অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে, বুঝবে সেদিন বুঝবে।

 

-অভিশাপ

 

দ্রোহ ও প্রেমের কবি নজরুল প্রেমে সিক্ত হয়েছেন বারবার। তাঁর অজস্র কবিতা ও গান সে প্রেমের সাক্ষী হয়ে আছে। আর তাঁর প্রেমের তীব্রতার পাশাপাশি প্রেমের ব্যর্থতাও তাঁকে আকীর্ণ ও অভিমানী করে তুলেছে বারংবার। কবি তাঁর প্রথম স্ত্রী নার্গিসকে বিয়ের রাতে রেখেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান অজানা এক অভিমানে। কবির প্রেমিক হৃদয়ের অভিমানী সত্তার প্রকাশ দেখি তাঁর কবিতায়। কবি বলছেন-

কখন সে কার ভুবনভরা

ভালোবাসা হেলায় হারালি,

তাইতো রে আজ এড়িয়ে চলে

সকল স্নেহে পথে দাঁড়ালি।

ভিজে ওঠে চোখের পাতা তোর,

একটি কথায় ---- অভিমানী মোর!

 

-------- বেদনা-অভিমান, ছায়ানট

কবি নজরুল ইসলাম

কবি অভিমানী সত্তা তাঁকে বাঁধনহারা করেছে, কবিকে গৃহহারা করেছে। আর তাই কবির লেখায় দেখি---

 

বাঁধন গৃহের সইল না তোর,

তাই বলে কি মায়া ও ঘরের ডাক দেবে না তোকে?

অভিমানী গৃহহারা রে!

--------(ঐ)

 

এইভাবেই নানা কবিতা ও গানে কবির তীব্র অভিমানী সত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যারা একসময় তাঁর সমালোচনায় সরব ছিল আজ তাঁরাই কবিকে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরাচ্ছে। নজরুল জানতেন একসময় তাঁকে স্মরণ করা হবে কিন্তু তিনি আর তখন থাকবেন না। আজ নজরুল আমাদের মাঝে শরীরীসত্তায় নেই কিন্তু তিনি আছেন তাঁর বিদ্রোহে, তাঁর প্রেমে, তাঁর অভিমানে। ৪৪ তম প্রয়াণ দিবসে স্মরণ করছি চির অভিমানী কাজী নজরুল ইসলামকে।

 

সাদিয়া আফরিন

প্রভাষক

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়।

Share this content: