বিকল্প ভাবনা

বিক্ষিপ্ত ভাবনা

বিক্ষিপ্ত ভাবনা

আজ বড়দিন। পেজা  তুলোর মত তুষার ঝরছে অনবরত। চারিদিকে পিন-পতন  নীরবতা। প্রকৃতি যেন শুভ্র বসনে সেজেছে আজ।  খ্রিস্টান ধর্মালম্বীরা তাদের প্রিয়জনদের নিয়ে  বড় দিন উদযাপনের আনন্দ উপভোগ করছে। তাদের জন্য থাকল বড়দিনের শুভেচ্ছা।   

ভাবনা গুলো যখন  বিক্ষিপ্ত হয়ে পরে তখন লিখার রসদগুলো  গুছিয়ে নেয়া যায় না সহজে।  আমার হয়েছে সেই দৈন দশা।  কিছু  লিখতে যেয়ে  সবকিছু চলে আসে।  তবুও  শব্দের রং তুলি দিয়ে ছবি আকতে ইচ্ছে  করে।  ইচ্ছে করে লিখি জীবনের কথা, ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। 

ক’দিন আগে হয়ে গেল বিশ্ব কাপ ফুটবল। মেসি কে Golden Ball Award দিয়ে বিশ্ব সেরা ফুটবল খেলোয়াড়  হিসেবে পুরস্কৃত করা হোল।   এই পৃথিবী নামক গ্রহে মেসি সবচেয়ে ভাল ফুটবল খেলোয়ার। বিশ্ব বলতে পৃথিবীকে বুঝেছি।  অন্যদিকে  বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বলতে বুঝি  অসীম মহাশূন্য আর সেই মহাশূন্যে অবস্থিত সকল শক্তির সমষ্টি। যাকে আমরা ব্রমান্ডও বলে থাকি। যেহেতু শক্তির বিনাশ নাই। আর শক্তি রুপান্তর সম্ভব। তাই  বস্তু বা অবস্তু যা কিছু আছে সবই শক্তি দিয়ে বুঝান যেতে পারে। 

জীবের প্রান ধারনের উনুকুল পরিবেশ বিরাজ করায় জীবন নিয়ে জীবরা এই ব্রমান্ডের পৃথিবী নামক অতি ক্ষুদ্র গ্রহে আজ অবধি  টিকে আছে। অনুজীব ভাইরাস থেকে শুরু করে মানব নামের জটিলতম/উৎকৃষ্ঠতম প্রানীর এই গ্রহে বাস। আমরা নিজেদের উৎকৃষ্ঠতম প্রানী বলে দাবী করি কারন মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা সর্বৎকৃষ্ঠ। আমাদের অনুভব এবং চিন্তা করার  ক্ষমতা অন্য প্রানীদের চেয়ে অতিমাত্রায় উৎকর্ষ। এতে একদিকে যেমন নিজেদের টিকিয়ে রাখতে সুবিধা হয়েছে অন্যদিকে আমরা আমাদের জীবনকে করে ফেলেছি বহুগুনে জটীল। তবে ব্রমান্ডের অন্য কোথাও মানব জাতির চেয়ে স্মার্ট কোন প্রানী আছে কিনা কে জানে?  প্রানী বল্লাম  হালকা কথায়। তারা আদৌ প্রানী কিনা না অন্য কিছু তাই বা কে জানে? প্রানী বলতে আমরা বুঝি জীবন।  জীবনের মোদ্দা উপকরন হল  DNA/RNA। এই DNA/RNA এর মাধ্যমে জীব জগত তার আগত প্রজন্মে  নিজের বৈশিষ্ট  সঞ্চালিত করে।  অন্য গ্রহে ভিন্ন কোন জীবন পদ্ধতি থাকলেও থাকতে পারে যাদের  জেনেটিক সিস্টেম  DNA-RNA এর মত কার্বন বেইজড নয় বরং সিলিকন বেইজড।   

UFO,  ফ্লাইং সসার, এলিয়েন এসবের কথা আমরা কম বেশি অনেকেই  শুনেছি।  কে জানে তারা আমাদের নিয়ন্ত্রন করছে কিনা দুর গ্রহ নক্ষত্র থেকে। আমরা  আমাদের  চিন্তা শক্তি দিয়ে ভাবছি আহা কতকিছুই না আবিস্কার করে ফেলছি । আর ওদিকে এলিয়েনরা আমাদের কীর্তি দেখে হয়ত মুচকি হেসে বলছে,  কি সব করছে পৃথিবীর মানুষ গুলো। এখনও ইলেক্ট্রিক সার্কিট আর চিপস এর গণ্ডি ই পেরুতে পারলনা।  যাই হোক আমাদের জানার গণ্ডির ভেতর আমরাই নিজেদের শ্রেষ্ঠ জীব বলে দাবী করি কারন আমরা আমাদের টিকিয়ে রাখার জন্য পরিবেশকে যতটা নিয়ন্ত্রন করতে পারি আর কোন জীব তা পারে না। নিজেকে এবং সর্বোপরি স্বজাতীয় কে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা জীবকুলের সহজাত ধর্ম।  তাই  নিজের বৈশিষ্ট পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চালন করার জন্য প্রকৃতি প্রজনন প্রক্রিয়া স্থাপন করে রেখেছে, হোক তা যৌন বা  অযৌন। এই টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে আমরা অন্য জীব নাশ করতেও পিছপা হই  না। ‘জীব হত্যা মহা পাপ’ এর মত শুধিজনের বিজ্ঞ বানী তখন বিষের বাঁশি হয়ে বাজে।  তথাপি এই নাশ বিনাশের মধ্যাও মায়া, মমতা আর ভালবাসার অনুভুতি গুলকে আগলিয়ে রাখতে ভাল লাগে আমাদের। যে প্রানী বধ করে ক্ষুধা নিবারন করি সেই প্রানী কেই পোষ্য করে মায়া মমতা প্রকাশ করে শান্তি পাই। 

ছোট বেলার লাটিম খেলার কথা মনে পরে গেল। সময় টা কেটেছিল করাচীতে।  উর্দু ভাষাভাষীর দেশ। ওরা লাটিম কে লাট্টু বলত। লাটীম  খেলায় এক সময় বেশ পারদর্শী হয়ে উঠছিলাম। জেনেছিলাম  শিশেম কাঠের লাটিম নাকি সবচেয়ে ভাল।  শিশেম কাঠ অনেক টা শাল কাঠের মত ভারি এবং পোক্ত। বাজার থেকে লাটিম কিনে এনে প্রথম কাজ ছিল চালিয়ে দেখা কত স্মুথলি লাটিম টা ঘুরছে। স্মুথ না হলে ওটার পেরেক বের করে নুতন পেরেক লাগিয়ে  ব্যাল্যান্সিং টা নিখুঁত করে নিতাম যাতে অনায়াসে স্মুথলি লম্বা সময় ধরে ঘুরতে পারে। লাটিমের কিছু কিছু কৌশল রপ্ত করেছিলাম অনেক কসরত করে। একটা ছিল শুন্যে লাটিম ঘুরিয়ে মাটিতে পরার আগেই হাতের তালুতে নিয়ে নেয়া।  ঘুরন্ত লাটিম টিকে হাতের তালু থকে বুড়ো আঙ্গুলের নখে নিয়ে আসতাম।  পাড়ার সমবয়সীদের সাথে লাটিম খেলা হতো। জিতলে একটা লাটিম পেতাম আর হেরে গেলে একটা দিয়ে দিতে হতো। প্রায়ই জিততাম।  জমে যেত এক গাদা লাটিম।  ছেলে বেলায় যা হয়, পড়াশোনা বাদ দিয়ে খেলায় মেতে থাকা হতো। মার অনুশাসনে মাঝে মাঝে যেটা হত, সকালে উঠে দেখতাম সবগুল লাটিম দু ভাগ করে কেটে রাখা হয়েছে। দারুন ভাবে মন খারাপ হতো। মনে হত লাটিম ভাঙার পরিবর্তে বেতের বারি পেলেও ভাল ছিল।  সেই কবে লাটিম খেলা ছেড়েছি  মনেও পড়েনা। আজ জীবন টা কেই  লাটিম মনে হয়। রশি মাইরা দিছে ছাইড়া ঘুরতে আছে জনম ভইরা।  কার লাটিম কে ঘুরাচ্ছে  কে জানে?

 

লেখা: মাহবুব আলম চৌধুরী

পিএইচডি, মলিকুলার জেনেটিক্স

গবেষক, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়

Share this content: