বিকল্প ভাবনা

ভাবতে নেই মানা

ভাবতে নেই মানা

সুঠাম, মেদহীন , পেশীবহুল, মসৃণ দৈহিক সৌষ্ঠবের জন্য আরবীয় ঘোড়ার তুলানা হয় না । দৌড় পারদর্শিতায়ও এরা অতুলনীয়। বিশ্বের অন্যতম ঘোড়ার তালিকায় আরবীয় ঘোড়া এখনও শীর্ষে। এককালে মূলত যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবেই এই ঘোড়া ব্যবহার করত আরব বেদুইনরা। বিদ্যুৎ গতি সম্পন্ন এই ঘোড়ারর গতি ভঙ্গীতে একটা অনন্য অসাধারন স্টাইল লক্ষ্য করা যায়। যা সহজেই দর্শকের মন কাড়ে।

বিংশ শতাব্দীর ষাট দশকের কথা। প্রাইমারী স্কুলে পড়ি খুব সম্ভবত। আমার সমবয়সীদের কাছে তখন Fury ছিল আসম্ভব জনপ্রিয়একটা TV সিরিয়াল। সিরিয়াল গুলোতে একটি চঞ্চলমতি দুষ্টু ছেলে কে চিত্রায়ন করা হয়েছিল। তার দুষ্টুমির জন্য ছেলেটি প্রায়ই নানান বিপদের সম্মুখীন হত। যতবারই বিপদে পড়ত Fury চলে আসত ওকে রক্ষা করতে। ওর দুঃসময়ের বন্ধু ছিল Fury নামের আকর্ষণী এক আরবীয় ঘোড়া। লোমহর্ষক উত্তেজনা নিয়ে সিরিয়াল গুলোর প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতাম। অপেক্ষায় থাকতাম কখন কিভাবে Fury তার ছোট্ট মনিবটিকে বিপদের হাত থেকে উদ্ধার করে, দেখার।

আরবীয় ঘোড়ার কথা বলতে গিয়ে একটা ধাঁধার কথা মনে পড়ে গেল। ধাঁধাটি হাই স্কুলে পড়া কালীন সময়ে ইংরেজী পাঠ্য পুস্তকে পড়েছিলাম, যতদুর মনে পড়ে। যাই হোক, ধাঁধা টি বলছি ।

এক ছিল বৃদ্ধ। নাম তার সামির। সামিরের ছিল দুই ছেলে, সাকিল ও আকিল। ছেলে দু'টো অলস এবং অকর্মা। তাদের নিয়ে সামিরের চিন্তার অন্ত ছিলনা। বয়স হয়েছে যে'কোনো সময় পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। ছেলে দুটো কি করে দিন গুজরান করবে ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে পরতেন সামির। সময় গড়াতে লাগল। সামির কঠিন অসুখে পড়লেন। বুঝতে পারলেন জীবনের আর বেশীদিন বাকী নেই। ভাবছিলেন তার যা সয়সম্পত্তি আছে তা ছেলেদুটোর মধ্যে বণ্টন করে দিবেন, কিন্তু কিভাবে? রাতে স্বপ্নদেব আবির্ভূত হলেন। জানালেন ঘোড় দৌড়ের ব্যবস্থা করতে। তবে দৌড় হবে একটু ভিন্ন ধাঁচের। যার ঘোড়া গন্তব্য স্থলে শেষে পৌছবে সে সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ পাবে আর অন্যজন পাবে বাকী এক তৃতীয়াংশ।

ঘুম ভাংল সামিরের। ছেলেদের ডেকে ঘোড়দৌড়ের কথা জানালেন। বাড়ীর আঙিনা থেকে দৌড় শুরু হবে এবং মাইল খানেক দূরে যে মসজিদ টা আছে সেখানে যেয়ে শেষ হবে। দুই ছেলের দু'টো তাগড়া আরবীয় ঘোড়া ছিল। সাকিলের ঘোড়ার নাম ছিল উল্কা আর আকিলের ঘোড়ার নাম ছিল ফুল্কা। কথা হল, যার ঘোড়া গন্তব্যস্থলে শেষে পৌছবে সে পাবে সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ আর অন্যজন পাবে বাকী একতৃতীয়াংশ। শুরু হোল ঘোড়দৌড়। অকর্মা ছেলে দুটো রাজী হয়ে গেল। ভাবল এ আর কি তেমন কঠিন কাজ। সাকিল তার উল্কার পিঠে আর আকিল তার ফুল্কার পিঠে সওয়ার হোল। ঘন্টা দুই পার হয়ে গেল। কিন্তু কেউই তেমন এগুচ্ছেনা, পাছে আগে পৌঁছে যায়। ছেলে দু'জন বুঝতে পারল দৌড় টা যত সহজ ভেবেছিল অত সহজ নয়। কেওই গন্তব্যস্থলে পৌছতে পাড়ছেনা।

সমস্যার সমাধান খুঁজতে ছেলেরা এক ঋষির সরাণাপন্ন হোল। ঋষি তাদের দু'টো কথা (শব্দ) পরামর্শ দিলেন। পরামর্শ পালন করে তাদের সমস্যার সমাধান হয়েছিল। সাকিল আর আকিল আর পিছিয়ে না থেকে প্রানপনে ঘোড়া ছুটাল আগে ভাগে গন্তব্য স্থলে পৌঁছানোর লক্ষ্যে। ঋষির কথা শুনে তারা গন্তব্য স্থলে পৌছতে সক্ষম হোল। ভেবে বলুনতো কথা দুটো কি ছিল???

 

লেখা: মাহবুব আলম চৌধুরী

পিএইচডি, মলিকুলার জেনেটিক্স

গবেষক, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়

Share this content: