গল্পের মৌচাক

অণুগল্প: বড়শি

অণুগল্প: বড়শি

করিম প্রতিদিন খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে। । সকালের প্রার্থনার পর সে নিয়ম করে হাঁটতে যায়। আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় প্রাত্যহিক কাজ শেষ করে না করেই তরিঘরি করে অফিসে চলে এল। পাঁচটার অফিস সাড়ে সাতটায় শেষ করে দ্রুত রাস্তায় নেমে এল। রাস্তায় যানবাহনের তুলনায় মানুষ বেশি। রাস্তায় পা দিয়েই তার মানে হলো আজ সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি। সারাদিনে মাত্র তিন চার মগ পানি ছাড়া আর কিছু খাবার সময় হয় নি তার। পিয়ন নিয়ে অফিসে শুরু হয়েছে এক নতুন যন্ত্রণা। কিছু দিন আগে পিয়ন আবুলের রোড একসিডেন্ট হয় । তারপর থেকেই কানে কম শোনে । তিন বার বেল বাজালে একবার আসে।

সারাদিন ক্ষুধার্থ তারপর বসের ঝাড়ি। ক্লান্ত পায়ে হেঁটে চলে করিম। বয়স চল্লিশ ছুইছুই। হালকা হলেও চর্বি জমতে শুরু করেছে। এখন আর আগের মতো হাঁটতে পারে না। সামনের মোড়টা পার হলেই রিক্সা পাওয়া যাবে। মোড়ের কাছাকাছি আসতেই ঈসা বিরিয়ানির গন্ধ নাকে আসে তার । এই এক সমস্যা তার। খাবারের গন্ধ নাকে আসলে সে আর ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না। এখন বিরিয়ানি খেলে বাসায় গিয়ে আর খেতে পারবে না । তার স্ত্রী সোহানা বাইরের খাবার খেতে বার বার নিষেধ করেছে । এছাড়া ইদানিং দেশে ভয়ঙ্কর এক ঘটনা ঘটেছে। বাইরের খাবার খাওয়ার সাথে সাথে মানুষ অদৃশ্য হতে শুরু করেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এর কোন কারন খুজে পাচ্ছে না। ক্ষুধার্থ মানুষ সামনে পাওয়া ফ্রি মিষ্টি, চকলেট, চিকেন ফ্রাই কিংবা মিট বল মুখে দিলেই সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে যায়। তার কলোনির হাসি খুশি কয়েক জন ক্ষুধার্থ যুবক এভাবে অদৃশ্য হয়ে গেছে। বাইরের খাবার খাওয়ার সাথে সাথে।

এসব ভাবতে ভাবতে হেঁটে যাচ্ছিল করিম l হটাৎ তার সামনে সুদৃশ্য প্লেটে সাজানো সুগন্ধ যুক্ত একটি চিকেন বল এসে হাজির হয়। সারাদিনের অভুক্ত করিম কোনকিছু চিন্তা না করেই সুস্বাদু চিকেন বলটি মুখের ভিতরে চালান করে দেয় । অসম্ভব ভাললাগায় শিউরে উঠে করিম । গলায় কাছে অস্বস্তি বোধ হয় তার । দু'পা সামনে এগিয়ে যেতেই গলায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে সে । চোখে সর্ষে ফুল দেখতে পায় সে । চোখ বন্ধ করেই বুঝতে পারে হাওয়ায় দুলছে সে । তীক্ষ্ম ধারালো কোন কাঁটা তার মুখের ভিতর দিক দিয়ে ঢুকে কন্ঠনালী বরাবর বের হয়েছে । বিভৎস ব্যথায় ছটফট করছে করিম। কাঁটার মাথায় প্রায় অদৃশ্য রশিতে ক্রমাগত উপরে উঠে যাচ্ছে করিম। পরনের কাপড় ভিজে যাচ্ছে রক্তের স্রোতে । তার শরীরের ওজনের কারনে কান্ঠনালীর কাছে বিদ্ধ কাঁটাটা লম্বলম্বি ভাবে গলা চিড়ে উপরে উঠতে থাকে। এবার কাঁটা টার অন্য প্রান্ত চোয়ালের হাড়ে আটকে যায়। করিম বুঝতে পারে তার আর বেশি সময় বাকি নেই। ঘোরের ভিতর চলে যায় করিম । প্রচণ্ড যন্ত্রণায় আওয়াজ করার শক্তিটুকু থাকে না করিমের। মেঘের উপর থেকে একটা স্পেসশিপ বেয়ে নেমে আসা অদৃশ্য সুতোয় ঝুলতে ঝুলতে উপরে উঠতে থাকে সে। অবশিষ্ট থাকা অনভুতিতে করিম বুঝতে পারে তাকে শীতল ধাতবপৃষ্টে শোয়ানো হয় । বিভৎস চেহারার একটা প্রাণী এগিয়ে আসে তার কাছে। মুখের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে প্রচণ্ড শক্তিতে বের করে আনে কাঁটা টা। আরও একবার ব্যথায় কুকরে ওঠে করিম। জ্ঞান হারানোর আগে করিম বুঝতে পারে তার চামড়া ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে ফ্রাই করে খাবে ভীনগ্রহী বাসীরা।

সোহানা সকালের নাশতা বানানো শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে। কি ব্যাপার আজ এত দেরি হয়ে গেছে অথচ করিম এখনও ঘুম থেকে উঠছে না কেন? দ্রুত রুমে যায় সোহানা। অবাক হয়ে যায় করিম কে দেখে । সমস্ত শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার। বিছানার চাদর পর্যন্ত ভিজে গেছে। সোহানা করিমের গায়ে হাত রাখে। ধরফর করে উঠে বসে করিম। বড় বড় করে শ্বাস নেয়। অবিশ্বাস্য চোখে চারিদিকে তাকায়। দুই হাত দিয়ে গলাটা চেপে ধরে। কোন ক্ষতচিহ্ন নেই, এটা বুঝতে পেরেই সোহানার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সোহানাকে জরিয়ে ধরে বারবার বলতে থাকে, "সোহানা আমি আর কোন দিন বরশি দিয়ে মাছ ধরব না"।

 

রোশন রোকন

Share this content: